Category:জীবনী ও স্মৃতিচারণ: বিবিধ
অমরত্ব লাভের চেষ্টা সব মানুষের মনেই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সে জন্য বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেন। তাতে দু'চারজন সফল হতে পারেন। যাঁরা সফলতা পান তাঁদেরকে আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়ে ..
অমরত্ব লাভের চেষ্টা সব মানুষের মনেই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সে জন্য বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেন। তাতে দু'চারজন সফল হতে পারেন। যাঁরা সফলতা পান তাঁদেরকে আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের লোকেরা কর্মের মাধ্যমে নিজেরাও অমর হবার চেষ্টা করেন। এভাবে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে।
প্রত্যেক মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য কোনো না কোনো কাজ করতে হয়। এই কাজের গতি পূর্ব থেকেই নির্ধারিত থাকে না। অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষ তার কাজ বেছে নেয়। এই কাজের ধারাবাহিকতাই পৌঁছে দেয় প্রত্যেককে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে।
সমাজের কল্যাণে, অপরের কল্যাণে নিজের অর্জিত ধন-সম্পদ দান করেন এ রকম বহু প্রমাণ রয়েছে। অন্যকে দান করার মধ্য দিয়ে মানুষের মহত্ত্ব ফুটে ওঠে। অন্যকে সাহায্য করার ভেতর থেকে মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। আর্ত-পীড়িত মানুষের কল্যাণে দানের ভেতর দিয়ে তার হৃদয়ের পরিমাপ করা যায়। সততা, ধর্মপরায়ণতা ও ন্যায়নিষ্ঠার দ্বারা চারিত্রিক গুণাবলির পরিচয় মেলে; একনিষ্ঠতা ও পরিশ্রমের দ্বারা বড় হবার, প্রতিষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমে স্বস্ব নামের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। মানবসেবার দ্বারা কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের অবদান স্পষ্ট হয়ে যায়। আর সর্বোপরি দেশে শিক্ষা বিস্তারে, শিক্ষা সম্প্রসারণে যারা অর্থবিত্ত বিলিয়ে দেয়ার উদারতা দেখাতে পারেন, জাতি তাঁদের চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখে। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত এমন একজন ব্যক্তি হলেন রাগীব আলী।
তিনি অনেক কষ্টে বিদেশ বিভূঁইয়ে যে অর্থ উপার্জন করেছিলেন তার সিংহভাগ দেশের মানুষের কল্যাণে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মন্দির প্রতিষ্ঠাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্রিজ, রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ করেছেন এবং এখনো করছেন। বহু অসহায় মানুষকে তিনি সাহায্য সহায়তা করেছেন। এসব কল্যাণমূলক কাজে তিনি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। যারা তাঁর কাছে সাহায্য সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়েছেন তিনি খালি হাতে কাউকে ফেরত দেননি। এ রকম একজন মহৎ এবং দানবীর যিনি সমাজের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণের জন্য কি কি কাজ করেছেন, সমাজের সচেতন মানুষ তাঁকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন সে সবের বিস্তারিত বর্ণনা এ গবেষণাগ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে। এ গ্রন্থে সবার জন্যই জানার মতো রয়েছে অনেক তথ্য। সাধারণ পাঠকরা যাতে এ বই পাঠ করতে উৎসাহিত হন এবং সাহিত্য রস আস্বাদন করতে পারেন সে দিকে দৃষ্টি রেখে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহারে চেষ্টা করা হয়েছে।
আমার বিশ্বাস, রাগীব আলীর মতো একজন মহৎ লোকের কর্মময় জীবনধারা পাঠ করে মানুষের ভেতর বড় হবার, অন্যকে সহায়তা করবার আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠবে। সমাজের কল্যাণে অন্যরাও এগিয়ে আসবেন। গুণী লোকের প্রকৃত সম্মান দেয়া হলে সমাজে আরো প্রতিভাধর গুণীজনের সংখ্যা বাড়বে। দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে, উন্নতিতে তারা অবদান রাখার জন্য উৎসাহিত হয়ে আরো জনকল্যাণমূলক কাজে হাত দেবেন। ফলে দেশের উন্নয়ন হবে ত্বরান্বিত।
এ বইটি লেখায় যাঁরা রাগীব আলীর কর্ম সম্পর্কে তথ্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতে হয় তাঁরা হলেনঃ চৌধুরী হারুন আকবর, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, এম এম ইসলাম, দেওয়ান তৌফিক মজিদ লায়েক, দেওয়ান মোশতাক মজিদ, আবু সা'দ জওহার আহমদ, মোঃ আলতাফুর রহমান, মোঃ কাওসার হাওলাদার, মেজর (অব.) সায়েখুল হক চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুল হাই টিপু, জাবেদ আহমেদ প্রমুখ।
এখানে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয় রাগীব আলীর সহধর্মিণী প্রয়াত রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে, জীবদ্দশায় যিনি এই বই লেখার অগ্রগতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তাঁদের সংসার জীবনের অনেক ছোটখাটো কিন্তু বইয়ের তথ্য সন্নিবেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বই লেখা যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সে জন্য আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। কিন্তু এটি গ্রন্থাকারে দেখে যেতে পারেন নি। তাঁর হাতে আমার শ্রমের ফসল তুলে দিতে পারলে খুশি হতাম। পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট আমি তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করি। রাগীব আলীর কর্মের উপর তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। যিনি যে পেশায় কর্মরত, সেখান থেকে কোন দৃষ্টিতে রাগীব আলীকে দেখছেন, তাঁর কি কি গুণাবলি তাদের কাছে সেরা বলে মনে হয়েছে, কেন মনে হয়েছে তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। সাক্ষাৎকারদাতাদের প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা। একারণে প্রত্যেকের মতামত প্রদানে ভিন্নতা এসেছে, রয়েছে গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত। সাক্ষাৎকারদাতাদের যখন যার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে কেবলমাত্র সেই সময়কার তাদের কর্ম-পরিচিতি দেওয়া হয়েছে।
রাগীব আলী সময়ের কাজ সময়ে করেছেন। সেজন্য সাক্ষাৎকার দাতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ঐ সময়ে রাগীব আলীর স্বরূপ ফুটে উঠেছে। স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি একত্রিত করে গবেষণা করলে তাঁর প্রকৃত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।
সাক্ষাৎকারের কিছু কিছু কথা অভিন্ন মনে হলেও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনায়, কথাবার্তায় রাগীব আলীর গুণগুলো ফুটে উঠেছে। এদের সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে তাঁর আরো বহু গুণাবলির পরিচয় প্রকাশ পেত। তবে এ গ্রন্থে যাদের মতামত নেয়া হয়েছে তারা যে সব তথ্য দিয়েছেন এ নিয়েও বিস্তর গবেষণা হতে পারে। এই তথ্যকে ভিত্তি করে যারা বৃহত্তর পরিসরে রাগীব আলীর জীবন ও কর্ম, তাঁর জীবনের আলোকিত অধ্যায় তুলে ধরতে চান তাদের জন্য এগিয়ে চলার একটি সিংহদ্বারের অর্গল খুলে দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।
Report incorrect information