9 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
পৃথিবীকে বোঝার জন্য আগে বুঝতে হবে নিজের দেহকে, ব্রহ্মাণ্ড থেকে দেহভাণ্ড
পর্যন্ত বিস্তৃত তান্ত্রিক আচার-আচরণ কত প্রাচীন, তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই; তান্ত্রিক মতাদর্শের মূলকথা..
TK. 500TK. 375 You Save TK. 125 (25%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
পৃথিবীকে বোঝার জন্য আগে বুঝতে হবে নিজের দেহকে, ব্রহ্মাণ্ড থেকে দেহভাণ্ড
পর্যন্ত বিস্তৃত তান্ত্রিক আচার-আচরণ কত প্রাচীন, তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই; তান্ত্রিক মতাদর্শের মূলকথা-ব্রহ্মাণ্ডে যে গুণাঃ সন্তি তে তিষ্ঠন্তি কলেবরে', অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডের সব গুণাগুণ মানবদেহের মাঝেই বিদ্যমান। নিজেকে বোঝার ও উপলব্ধি করার ভেতর দিয়ে বাকি ব্রহ্মাণ্ডের সাথে সংযোগ স্থাপন করার পথ হলো তান্ত্রিক মতাদর্শ। বঙ্গীয় ধারায় কৃষির আবিষ্কার, মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার সূচনা, কর্মযোগের প্রাধান্য ইত্যাদি অনুষঙ্গের সাথে তান্ত্রিক প্রথা-পদ্ধতির গভীর যোগাযোগের বিষয়গুলো তন্ত্রের প্রাচীনতাকে উপলব্ধিতে সাহায্য করে। তা ছাড়া সিন্ধু সভ্যতার প্রামাণিক উপকরণ থেকে তন্ত্র-পদ্ধতির প্রাচীনতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সাংখ্য ও তন্ত্রের পুরুষ-প্রকৃতির ধারণায় এর দার্শনিক বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। প্রকৃতি-পুরুষের এই দ্বৈরথের ওপর ভর করে হাজার বছর ধরেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন ভাবনা ও পদ্ধতি। মানবসভ্যতার সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পরিক্রমায় তন্ত্রের রয়েছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান।
দীর্ঘকাল ধরে নানা পরিবর্তন ও সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে তন্ত্র লাভ করেছে কিংবা এর প্রথা-পদ্ধতিকে মনে করেছেন নিতান্তই প্রাচীন পরিত্যাগযোগ্য অতীতের বিষয়। বিপরীতে বলা যায়, ফ্রয়েডের লিবিডো তত্ত্ব পুরো পৃথিবীর জ্ঞানকাণ্ডকেই নাড়িয়ে দিয়েছে, নতুনভাবে নির্মিতি দিয়েছে। আধুনিক জ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে দেখা হয় ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানকে। একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে ফ্রয়েডের লিবিডো তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহতত্ত্ব আসলে একই ধরনের ভিত্তিমূলের ওপর ভর করে তাদের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। প্রাচীন বাংলার (বৃহৎবঙ্গ এবং সন্নিহিত অঞ্চলে) তান্ত্রিক চিন্তাচেতনার যে মূলকথা অর্থাৎ দেহের সাপেক্ষে বা শারীরবৃত্তির মৌল প্রবণতায় বিশ্ববীক্ষার যে দেহাত্মবাদী পদ্ধতি তার সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে যায় আধুনিক যুগের ইউরোপীয় মনোবিশ্লেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের (১৮৫৬-১৯৩৯) লিবিডো তত্ত্ব (Libido theory) তথা কামপ্রবৃত্তির সম্প্রসারণ তত্ত্ব। বঙ্গীয় মদনতত্ত্ব ও ফ্রয়েডের এরস-ও (Eros) প্রায় একই বিষয়। মদন যেমন ভারতীয় কাম দেবতার নাম, এরস-ও তেমনি গ্রিক পুরাণের আফ্রোদিতির সন্তান-প্রেমের দেবতা। দেহের বাইরে সজীব পৃথিবীকে কামপ্রবৃত্তির আলোকে দেখার পদ্ধতিও তান্ত্রিক ধারা এবং লিবিডো তত্ত্বে প্রায় একই রকম।
তন্ত্রের সাধন পদ্ধতিতে যোগের অনুশীলনে দেহকে নিয়ন্ত্রণে রেখে পৃথিবী জয়ের যে প্রক্রিয়া অর্থাৎ কামতাড়না বা সহজাত প্রবৃত্তিকে সংহত করে অন্যান্য কর্মযজ্ঞে ব্যাপৃত হওয়ার বিষয়ে তন্ত্র যেমন বলছে দেহভিন্ন কোনো আধার নেই, তেমনি ফ্রয়েডের লিবিডোও বলছে ইড্, ইগো এবং সুপার ইগোর (Id, ego and super- ego) ভেতর দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আমাদের কর্মপ্রক্রিয়া। কাজেই আমরা তন্ত্রের দেহতত্ত্ব ও ফ্রয়েডের তত্ত্বগুলোর তুলনামূলক আলোচনায় তুলে আনতে পারি তন্ত্র ও ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি, যা আমাদের জ্ঞানজগতে নতুন পরিমণ্ডলের উন্মেষ ঘটানোর সূচনা হতে পারে।