Category:রোমান্টিক উপন্যাস
► আত্মপ্রকাশ
► যুবক-যুবতীরা
► সরল সত্য
► গভীর গোপন
► আত্মপ্রকাশ
► যুবক-যুবতীরা
► সরল সত্য
► গভীর গোপন
► দর্পণে কার মুখ
► সুদূর ঝর্নার জলে
► স্বপ্ন লজ্জাহীন
► অরণ্যের দিনরাত্রি
রবীন্দ্রনাথের পরে তিরিশের দশকে আমরা কয়েকজন সব্যসাচী লেখককে পেয়েছি। পঞ্চাশের দশকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ই (জন্ম ১৯৩৩) সম্ভবত একমাত্র সব্যসাচী লেখক―যিনি কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, শিশু-কিশোর সাহিত্য, প্রবন্ধ, অনুবাদ ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখায় সমান পারঙ্গম। আর রবীন্দ্রনাথ ও তিরিশের মহান পূর্বসূরিদের মতো তিনি নিরন্তর নিরলসভাবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা যেমন বিচিত্র তেমনি বিপুলায়তন হয়ে উঠেছে।
কবিতা ও গদ্য―দুই ক্ষেত্রেই এক অভিন্ন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে চেনা যায়। যৌবনের তাপ, আভা ও সংরাগ এমনভাবে লেগে আছে তাঁর সমস্ত রচনায়, কবিতায় ও গদ্যে, যেখানে অন্যদের থেকে তিনি একেবারেই পৃথক। কবিতা ও গদ্য―দু-জায়গাতেই তিনি স্মার্ট ও নাগরিক, সচেতন ও সুখপাঠ্য, তরতাজা ও স্বচ্ছন্দ, জরা ও জাড্য থেকে সম্পূর্ণ বিমুক্ত। আলবেয়ার কাম্যু সেই যে একবার বলেছিলেন, 'No style, is the best style'―সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনারীতি তারই স্মারক। আধুনিকতা অর্জনের জন্যে সুনীলের কোনো আয়াস নেই, আধুনিকতার অন্তরাত্মাকে তিনি এমনভাবে স্পর্শ করে আছেন যে তাঁর ভাষা বা ভঙ্গিমায় প্রয়াসের কোনো স্বেদবিন্দু চোখেই পড়ে না। হয়ত সমকালের ভিতর-মাত্রাটিকে তিনি অনায়াস সারল্য ও সাবলীলতায় ধারণ করে আছেন বলেই তাঁর সমসাময়িক অনেকের রচনায় যখন ক্লান্তি ও ঘামের ফোঁটা, সুনীল তখন চনমনে যুবকের মতো আজকের তরুণ-তরুণীদের 'ম্যাটিনী আইডল' হয়ে ওঠেন।
এই জরাহীন তারুণ্যের রহস্য হয়ত সুনীলের তাবৎ শিল্পসৃজনেরই গোপন উৎস। কিন্তু একটি বিষয় অন্তত স্পষ্ট যে কবিতায়-ছোটগল্পে-উপন্যাসে সুনীলের এক কেন্দ্রীয় বিষয়: প্রেম। নারীর প্রতি তাঁর অফুরান মুগ্ধতা, নারীর শরীর ও আত্মার প্রতি তাঁর অনিরুদ্ধ অদম্য আকর্ষণ, নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি মোহ ও মায়া সুনীলের সংখ্যাহীন রচনার মধ্য দিয়ে এক অমর ঝর্নাধারার মতো ছুটে চলেছে।
তাই প্রেমের উপন্যাস রচনায় তাঁর স্বাভাবিক কুশলতা। তাঁর প্রথম যে-উপন্যাস সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল, সেই "আত্মপ্রকাশ" তো প্রেমেরই উপন্যাস (উপন্যাসটি বর্তমান সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে)। স্বনামে তো বটেই, 'নীললোহিত' ছদ্মনামেও তিনি অনেক প্রেমের উপন্যাস লিখেছেন (যেমন, এই 'সংগ্রহভুক্ত "সুদূর ঝর্নার জলে" উপন্যাসটি)। বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র-পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁর "অরণ্যের দিনরাত্রি"কে (এই সংগ্রহভুক্ত) তো চিরজীবী করে দিয়েছেন―যে উপন্যাস রুদ্ধশ্বাস নাগরিক জীবনের শ্রান্তি-ক্লান্তি থেকে প্রকৃতির সবুজ শুশ্রুষায় আমাদের অবগাহন-স্নান করতে দ্যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অজস্র উপন্যাস থেকে এ রকম আটটি শ্রেষ্ঠ প্রেমের উপন্যাস ("আত্মপ্রকাশ”, "যুবক-যুবতীরা", "সরল সত্য”, “গভীর গোপন”, “দর্পণে কার মুখ", "সুদূর ঝর্নার জলে”, “স্বপ্ন লজ্জাহীন” ও "অরণ্যের দিনরাত্রি") এই বিশাল সংগ্রহে স্থান পেয়েছে। এই নির্বাচন স্বয়ং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের।
নর-নারীর জৈব ও অজৈব প্রেমের সম্পর্কের বহু বিচিত্র টানাপোড়েন, মায়া ও বিচ্ছেদের বহুমাত্রিকতা এই উপন্যাসগুলিতে এমনভাবে উপস্থিত যে আমরা উপলব্ধি করতে বাধ্য হই: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাদেরই প্রেমের অতল রহস্য ও বিচ্ছেদের গভীর বেদনার এক অনশ্বর রূপকার।
Report incorrect information