Category:সমকালীন উপন্যাস
কাকের স্বভাবই হলো--- অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো আর সময় অসময় কর্কশ স্বরে ক্কা-ক্কা করে ওঠা। লেখক তাঁর এই উপন্যাসে ঠিক সেই কাকের চরিত্রেই প্রবেশ করেছেন। সারাক্ষণ অন্যের দোষ খুঁজে বেড়..
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
কাকের স্বভাবই হলো--- অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো আর সময় অসময় কর্কশ স্বরে ক্কা-ক্কা করে ওঠা। লেখক তাঁর এই উপন্যাসে ঠিক সেই কাকের চরিত্রেই প্রবেশ করেছেন। সারাক্ষণ অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ান আর সময়-অসময় চিৎকার করে ওঠেন। এভাবে সবার দোষ খুঁজতে খুঁজতে এক সময় তিনি নিজের দোষটি ঠিক খুঁজে পান।
সত্যি বলতে উপন্যাসের মর্ম অত্যন্ত গভীর। যারা সত্যিকার অর্থ-এ পাঠক কেবল তারাই এর গভীরতা অনুধাবন করতে পারে। নচেৎ হাসতে হাসতে বই শেষ করে ফেলে ঠিকই কিন্তু এর গভীরতা সেই পাঠকের হৃদয়ে কোনো দাগ কাটে না। জ্বি, উপন্যাসটিকে রম্য উপন্যাসও বলা যেতে পারে।
এই উপমহাদেশে কিম্বা তারও বাইরে অন্য কোনো লেখক এই মাপের কিম্বা এই ধাচের কোনো উপন্যাস লিখেছেন কি-না আমার ধারণা নেই। তবে এই বাংলাদেশে আর কোনো উপন্যাসিককে আমি অন্তত এই ধাচে লিখতে দেখিনি।
আশা করি সত্যিকার পাঠক যারা তারা উপন্যাসটি পড়লে ভালো লাগার পাশাপাশি এর মর্ম অনুধাবনে আনন্দবোধ করবেন। পাঠকদের সুবিদ্বার্থে এক পাঠকের এই বই সম্পর্কে মতামত তুলে ধরলামঃ-
আপনি কি কখনো কাকের চোখে নিজেকে দেখছেন?
দু'দিন আগে 'কাকচরিত্র' বইটা পড়ছিলাম। কিন্তু রিভিউ লেখার সাহস তখনও সঞ্চয় করতে পারিনি।
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি—আমি লেখকের মনের ভাব পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারিনি। তবে এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, পাঠক এই বই পড়লে হতাশ হবেন না।
আপনি কাক কি-না তা নির্ণয় করার আগে অবশ্যই কাকের চরিত্র সম্পর্কে জানতে হবে।কাকের স্বভাবই হলো -অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো আর সময় অসময়ে কর্কশ স্বরে ক্কা-ক্কা করে ওঠা।লেখক ঠিক কাক নিয়ে এখানে আলোচনা করেন নি,তবে কাকের চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছে। পুরো উপন্যাসজুড়ে একাধিক চরিত্রের কথা এসেছে, যাদের মাধ্যমে কাকের স্বভাবের নানা রূপ ধরা পড়েছে।
তবে এখানে আমি কেবল কয়েকটি চরিত্রের কথা তুলে ধরবো, যারা বিশেষভাবে চোখে লেগে আছে।
অবশ্যই! তোমার পাঠানো লেখাটি অবলম্বনে আমি একটি গোছানো রিভিউ আকারে লিখে দিলাম:
‘মানুষ গড়ার পাঠশালা’ – এক অনন্য চিন্তার প্রতিফলন, যেখানে একমাত্র শিক্ষক হচ্ছেন "অধ্যাপক" নিজেই। পরিবারের সদস্যরাই তাঁর ছাত্রছাত্রী, তবে অধ্যাপকের একমাত্র কন্যা ছাড়া সবাই তাঁর প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করে। পাঠশালার সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর পঙ্ক্তি—
"সাতকোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি"
—এর মাধ্যমে, যেন একটি আত্মবিশ্লেষণের দরজা খুলে যায়।
পাঠশালার প্রথম পাঠ তিনটি মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে গঠিত:
১. আমি কে?
২. আমি কি সত্যিকারের মানুষ?
৩. আজ সারাদিনে আমি কী কী খারাপ কাজ করেছি?
এই তিনটি প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে অধ্যাপক চেষ্টা করেছেন অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার স্পৃহা জাগাতে। বাঁধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি মানবিকতার বীজ বুনতে পেরেছেন।
বইটির শুরুতেই আমরা পরিচিত হই মূর্তজা চরিত্রের সাথে—একজন ব্যক্তি, যিনি সারাজীবন শান্তি খুঁজে পাননি। তিনি দেশসেবার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও ধর্মের প্রতি ছিল না কোনো বিশ্বাস। কাকের চরিত্রের সাথে তাঁর মিল রয়েছে। তবে এর বিপরীতে হাজির হয়েছে যুক্তিবাদী আরেকটি কণ্ঠ—হয়তো কমরেড ফরহাদ, কিংবা আহমদ শরীফ, বা হয়তো অন্য কোনো হারিয়ে যাওয়া আদর্শবাদী। লেখক এখানে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ভণ্ডামির বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, রেফারেন্সসহ। অনেকেই লেখককে নাস্তিক বলে ট্যাগ করতে পারে (যেমনটি 'নন্দীপাড়া আজও বৃষ্টি পড়ে' বইয়ের রিভিউতে দেখা যায়), কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এই অংশটি লেখকের চিন্তাশক্তির গভীরতা ও সাহসিকতারই প্রমাণ।
মেম্বার চরিত্রটির মাধ্যমে লেখক আমাদের দেখিয়েছেন, মানুষ কখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মেম্বারের রাজাকারী চরিত্রায়ন বুঝিয়ে দেয়—সব ভুলের ক্ষমা হয় না। মানুষ তার দায়িত্ব ভুলে গেলে ইতিহাস তাকে সহজে ক্ষমা করে না।
শেষে উপস্থিত হয় মনোজ মিত্রের 'কাক চরিত্র' নাটকের সেই কাক, যার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সব সত্য অনাবৃত হয়ে পড়ে।
আরও কিছু চরিত্র আসে, প্রতিটিতেই লেখক নিজেকে খোঁজার, নিজের দোষ আবিষ্কারের এক অনুপম প্রয়াস দেখান।
কাকের উদ্দাম চেঁচামেচিতে ধ্রুবের ঘুম ভাঙে—আর ধ্রুপদ বাবু পরিসমাপ্তি টানেন এক গভীর স্বগতোক্তির মাধ্যমে।
সমগ্র বইজুড়ে প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি অনুরণিত প্রশ্ন পাঠককে স্তব্ধ করে ভাবতে বাধ্য করে—আমি কে? আমি কি সত্যিই মানুষ? আমি কোন পথের যাত্রী?
বই: কাকচরিত্র
লেখক: ধ্রুপদ
ঘরানা: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী:ভোরের শিশির
মুদ্রিত মূল্য: ৬০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৪০
ব্যাক্তিগত রেটিং :১০/১০
............. রিভিউ লিখেছে Chytee Shahana
----প্রকাশক
Report incorrect information