পৃথিবীর অন্য অনেক দেশে যখন বাস্তব ও কারিগরী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তরুণ শিক্ষার্থীরা দক্ষ হয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে বদলে দিচ্ছে জীবন যাপন পদ্ধতির অনেক কিছুই, তখনও আমা..
TK. 200TK. 150 You Save TK. 50 (25%)
Product Specification & Summary
পৃথিবীর অন্য অনেক দেশে যখন বাস্তব ও কারিগরী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তরুণ শিক্ষার্থীরা দক্ষ হয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে বদলে দিচ্ছে জীবন যাপন পদ্ধতির অনেক কিছুই, তখনও আমাদের ছেলেমেয়েরা কোন রকম বুঝে না বুঝে স্নাতক সম্পন্ন করে কয়েক বছর কাটিয়ে দিচ্ছে চাকরি পাবার জন্য এক অপ্রয়োজনীয় পড়াশোনা নিয়ে।
কিন্তু চাকরির ক্ষেত্র, কাজের জায়গার সাথে সেই পড়াশোনার কোন মিল নেই! আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার শুরুর গলদ নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বাতিল করতে বিশেষজ্ঞরা একমত থাকার পরও এক অজানা কারণে তা ছোট বাচ্চাদের জন্য আজ অবধি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে!
আমাদের দেশে বিশ্বায়নের এই যুগে এসেও আমরা যখন গাদা গাদা বইয়ের চাপ আর যন্ত্রণায় কাতর, আমরা যখন গোল্ডেন এ প্লাসের গৌরবে ভুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছি চারপাশে, আমি তখন একটু রবীন্দ্রনাথকে পাশ ফিরে দেখি। শিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “শিখিবার কালে, বাড়িয়া উঠিবার সময়ে, প্রকৃতির সহায়তা নিতান্তই চাই। গাছপালা, স্বচ্ছ আকাশ, মুক্ত বায়ু, নির্মল জলাশয়, উদার দৃশ্য—ইহারা বেঞ্চি এবং বোর্ড, পুঁথি এবং পরীক্ষার চেয়ে কম আবশ্যক নয়” (শিক্ষাসমস্যা)।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি যেমন আছে, তেমনি গলদ আছে শিক্ষা বিষয়ে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবনা চিন্তায়। আমরা মোটেই বুঝতে রাজি নই, একটি দেশের বা জাতির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তেমন কোনো বড় ভূমিকা রাখেন না। আপনি দেশের সেরা মানুষের তালিকাটায় চোখ বুলান। সেখানে যাদের নাম দেখতে পাচ্ছেন, তারা ডাক্তার? তাহলে আমরা কেনো এই মূর্খ সংস্কৃতির চর্চা করছি গত কয়েক দশক ধরে। কেনো আমরা এক রকম জোর করে সেরা মেধাবীদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর দিকে ঠেলছি? পৃথিবীর কোন দেশে আছে এটা? না, কোনো দেশে নেই। আর আমরা সেকারণেই পিছিয়ে পড়ছি দারুণভাবে।
এ দেশে জন্মালে আইনস্টাইনকে আমাদের এই শিক্ষার অপসংস্কৃতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বানাতো। আমাদের দেশে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, অ্যারিস্টটল, জর্জ বার্নাডস, জন পল ডি জোরিয়া, জ্যাক মা যারা জন্ম নেয়; এদের আমরা বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে দেশ উদ্ধার করছি। না, বিসিএস ক্যাডার হবে, কিন্তু সেটা কোনো মানুষের স্বপ্ন হতে পারে না। দেশের সব মানুষ বিসিএস ক্যাডার হলে আমাদের জাতির কী আসবে যাবে? আমরা একবারও ভাবছি না, আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি দেশকে। আড্ডায় বাংলাদেশ নামে যারা আজকে নাক সিটকায়, তারা কেউ ভাবছে না, বাংলাদেশ মানে আমি, আপনি এবং যে নাক সিটকালো; আমরা সবাই। দেশকে উঁচুতে নিতে হলে মেধাবীদের সেভাবে তরি করতে হবে। গোল্ডেন এ প্লাসে কিছু হবে না। শিক্ষা ব্যবস্থার এতো গলদ আর ছাইপাস স্বপ্ন দেখা এ প্রজন্ম কী দিবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে?
বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সিলেবাস দেখলে মাথা ঘুরে যায়। চিলির রাজধানীর নাম কেনো মুখস্থ করবে এরা? পৃথিবীর সেরা শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে খ্যাত ফিনল্যাণ্ডের স্কুলে যখন প্রথম ৬ বছর কোন পরীক্ষা হয় না এবং ১০ বছরের স্কুলজীবন শেষে প্রথম বড় ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তখন বাংলাদেশে ফার্স্ট টার্ম, মিড টার্ম, বার্ষিক, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি’র মত শত শত পরীক্ষার মুখে শিশুদের মুখোমুখি করে দেয়া হয়; যা তাদেরকে কিছু শেখার আগেই প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়।