21 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
শোঁ শোঁ করে বাতাস বইছে চারদিকে। আকাশটাও মেঘলা মেঘলা। যেকোনো সময় ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামবে। বিছানার উপর পা মুড়ে হাঁটুর উপর মাথা রেখে বসে আছে নোরা। কত ইচ্ছে নিয়ে বাবার সাথে আমেরিকা এসে..
TK. 330TK. 284 You Save TK. 46 (14%)
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
Product Specification & Summary
শোঁ শোঁ করে বাতাস বইছে চারদিকে। আকাশটাও মেঘলা মেঘলা। যেকোনো সময় ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামবে। বিছানার উপর পা মুড়ে হাঁটুর উপর মাথা রেখে বসে আছে নোরা। কত ইচ্ছে নিয়ে বাবার সাথে আমেরিকা এসেছিল। খুব ঘুরবে, ফিরবে, খাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। নোরার বাবা জুনায়েদ আবসার সারাদিন অফিসের কাজেই ব্যস্ত থাকেন। মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ফুরসত নেই তার। তিনদিন হয়ে গেছে নোরা ওর বাবার সাথে আমেরিকা এসেছে।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি পড়া আরম্ভ করেছে। নোরা একছুটে ব্যালকনিতে চলে গেল। আকাশটা যে কী অপরূপ লাগছে! বৃষ্টির তেজ ক্রমেই বাড়ছে। নোরা ওর দুহাত ব্যালকনির বাইরে প্রসারিত করে দিলো। বৃষ্টির ফোঁটা ওর হাতে-মুখে আছড়ে পড়ছে। চোখের পাতায় পানির কয়েক ফোঁটা পড়তেই সে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
দৃশ্যটা দূর থেকে উপভোগ করছে এক ধূসর চোখের মানব। এর আগে বৃষ্টি উপভোগ করতে অনেককেই দেখেছে, কিন্তু এত আকুল হয়ে কাউকে বৃষ্টি উপভোগ করতে দেখেনি। হাতের নীল কাঁচের চুড়িগুলো বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় মোহনীয় হয়ে উঠেছে। চুড়িগুলো বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। বৃষ্টিকন্যার বৃষ্টিবিলাস দেখতে গিয়ে যে হাতের কফিই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই তার। বৃষ্টির মধ্যে কফি ছাড়া বৃষ্টিবিলাস এই মানবের কাছে নিদারুণ কষ্টের। তাই চট করেই রান্নাঘরে চলে যায় আরেক মগ কফি আনতে।
দরজায় কলিংবেল বাজতেই নোরা চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এগিয়ে যায় মেইন দরজার দিকে। সে জানে এখন কে এসেছে। তবুও এই মানুষটার উপর ওর চাপা অভিমান। দরজা খুলতেই জুনায়েদ আবসার মিষ্টি হেসে বলল, শুভ সন্ধ্যা, মামনি।
নোরা কোনো উত্তর দিলো না। গটগট করে ভেতরে চলে গেল। মেয়ের অভিমানের বিষয়টাও জুনায়েদ আবসারের অজানা নয়। বৃষ্টিতে কিছুটা ভিজে গেছে সে। তাই চট করে আগে পোশাক পরিবর্তন করে নিলো। কিচেনে গিয়ে মেয়ের জন্য পাস্তা রান্না করল। নোরা তখন টিভি দেখছিল। জুনায়েদ আবসার বাটিতে করে পাস্তা এনে মেয়ের সামনে ধরে। নোরা দেখেও না দেখার ভান করে রইল। সে ওর পাশে বসে বলল, খাবে না?
না, খাব না!
তুমি শুধু শুধু রাগ করছো, মামনি।
নোরা এবার বাবার দিকে ঘুরে বলল, রাগের কারণটা শুধু শুধু, পাপা?
দেখো, আমি কিন্তু আগেই বলেছিলাম এখন আমার সাথে আসার দরকার নেই। কারণ এখন আমি এসেছি ব্যবসায়ের কাজে। তাই আমাকে সারাক্ষণ অফিসে ব্যস্ত থাকতে হয়। এজন্যই বলেছিলাম, পরের কোনো ভ্যাকেশনে তোমার মা-সহ ঘুরতে আসব। তুমি তো শুনলে না।
কিন্তু পাপা, এটা আমার জন্য উপযুক্ত সময় ছিল। পরীক্ষা শেষ, কলেজ বন্ধ। এত লং টাইম ছুটি তো পেতাম না আর।
তাতে কী? আমি কলেজে প্রফেসরের সাথে কথা বলতাম।
তো তুমি কি এখন চাচ্ছো আমি চলে যাই?
না। এটা এখন সম্ভব নয়।
সম্ভব হলেও আমি যাব না। আমি কাল থেকে একাই ঘুরব।
কথাটি বলেই হাতের রিমোটটি সোফার উপর ফেলে নিজের রুমে চলে যায় নোরা।
মন খারাপ করে বসে রইলেন জুনায়েদ আবসার। মেয়েটা বরাবরই খুব জেদি। কিছু বললেও উলটো আরও রেগে যাবে। অগত্যা তিনি আর মেয়েকে কিছু না বলে স্ত্রী সায়লাকে কল দিলেন। সায়লা কল রিসিভ করে বলল, বাব্বাহ্! দিনশেষে মনে পড়ল তাহলে?
তুমিও অন্তত তোমার মেয়ের মতো বলো না।
কেন? আমার মেয়ে কী করল?
রাগ করেছে।
রাগ করেছে কেন?
ঘুরতে নিয়ে যাইনি তাই। তুমি তো জানোই অফিসের কাজে কত ব্যস্ত থাকতে হয় আমাকে।
নোরা কোথায় এখন?
ওর রুমে।
আচ্ছা, আমি ওকে কল দিচ্ছি।
সায়লা সুলতানা নোরাকে কল দিলো। ফোনের স্ক্রিনে হার্ট লেখা ভেসে ওঠা সত্ত্বেও নোরা কলটাকে ইগনোর করছে। এই মুহুর্তে প্রচুর রেগে আছে সে। মায়ের সাথে কথা বললেই রাগগুলো কান্নায় পরিণত হবে। কিন্তু সে কিছুতেই এখন কাঁদতে চাইছে না। তাই ফোনটা বালিশের নিচে রেখে চুপচাপ শুয়ে রইল। মনে মনে ভেবে নিয়েছে, সে আর অপেক্ষা করবে না। কাল সকাল হলে একাই ঘুরতে বের হবে।