45 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
আমস্টারডামে যখন প্লেন থেকে নামলাম আবহাওয়া বেশ ভাল ছিল।
আকাশ পরিষ্কার ছিল। যদিও আইলের সিটে বসা ছিলাম বাইরে কী হচ্ছে বোঝার জন্য জানালা দিয়ে উঁকি মারতে হতো। যত বেশি প্লেনে চড়ছি ততই উত..
TK. 320TK. 240 You Save TK. 80 (25%)
Product Specification & Summary
আমস্টারডামে যখন প্লেন থেকে নামলাম আবহাওয়া বেশ ভাল ছিল।
আকাশ পরিষ্কার ছিল। যদিও আইলের সিটে বসা ছিলাম বাইরে কী হচ্ছে বোঝার জন্য জানালা দিয়ে উঁকি মারতে হতো। যত বেশি প্লেনে চড়ছি ততই উত্তেজনাগুলো হারিয়ে ফেলছি, তাও সিটে বসে টের পেলাম আকাশ পরিষ্কার, বাতাস অনুকূলে। বিমান একদম নিখুঁতভাবে আমস্টারডামের মাটি স্পর্শ করলো।
ইমিগ্রেশন পার করে এয়ারপোর্টের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থেকে যখন বাইরে আসলাম, প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো। সবকিছু আগের মতোই সুন্দর আছে। সেই টিউলিপ ফুলের সমারোহ সেই প্রাণের উচ্ছ্বাস...
এবার অবশ্য আমি এই উচ্ছ্বাসের অংশ হতে আসিনি। এখানকার সেন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমি থাকি এস্তোনিয়ার তালিন শহরে। সেখান থেকে প্লেনে করে এখানে আসতে ৭ ঘন্টা লাগে। মাঝখানে ট্রানজট ছিল ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি শহরে। সব মিলিয়ে এ সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা আকাশে কাটানো হয়েছে। ১ সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ থেকে এস্তোনিয়া ফেরত এসেছিলাম।
হাসপাতাল থেকে প্রথমে আমাকে ইমেইল করা হয়েছিল। পরে ফোন, ভিডিও কল মিলিয়ে লম্বা সময়ে যোগাযোগ হয়েছে। যিনি যোগাযোগ করেছেন তিনি মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক। হাসপাতালে এসে তার খোঁজ করলাম, এত যোগাযোগের পরেও লোকটি খুব সতর্কভাবে প্রশ্ন করলেন,
“তুমি নিহাদ?”
মাথা নেরে সম্মতি জানিয়ে বললাম, “স্যরি আমি অনেক দূরে ছিলাম তাই আসতে সময় লেগে গেলো…”
আমার কথায় বিশেষ আমল না দিয়ে লোকটি সরাসরি কাজের কথায় চলে আসলো, “আমি কি এডপ্ট করার কাগজপত্র রেডি করব?”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
লোকটা মেশিনের মতো প্রশ্ন করে গেলো, “শেষকৃত্যের খরচ তুমি দিচ্ছো?”
“তুমি কোন চিন্তা করো না। তার জন্য সেরা কফিনটাই আমি বাছাই করতে চাই। খরচ যা করার আমি করব। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পার। তার শেষকৃত্য পরিপূর্ণভাবে করা আমার জন্য জরুরি। আমি একটা সুন্দর কফিন অর্ডার দিয়েছি।”
“তুমি যাকে এডপ্ট করছ, সেই বাচ্চাটার বয়স ৪ বছর। ওর নাম হচ্ছে লুকাস।”
“সে সুস্থ তো?”
“তার মা অসুস্থ হয়েছে তার জন্মের পরে। সাবধানতার জন্য লুকাসেরও পরীক্ষা করা হয়েছে। সমস্যা নেই।”
“আমি কি এখনই তার সাথে দেখা করতে পারি?”
“হ্যাঁ পার। তুমি বাংলাদেশের নাগরিক?” আমার পূরণ করা ফরম দেখে লোকটির মন্তব্য। বাংলাদেশ দেখে মনে হয় অবাক হয়েছে।
“হ্যাঁ। এটা কি অবাক হওয়ার মতো কোনো কথা? তুমি এত অবাক হচ্ছো কেন?”
“না, অবাক হচ্ছি না। আমি কিছু ডাচ পরিবার চিনি যারা বাংলাদেশের পথশিশুদের এডপ্ট করে ডাচ হিসেবে বড় করে। কখনো দেখি নি বাংলাদেশের কেউ আমাদের বাচ্চা নিয়ে যায়। তাই জিজ্ঞেস করলাম। তবে এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
“এটা আসলে সম্ভব হয়েছে বাচ্চার মা চেয়েছিল আমি বাচ্চাটাকে এডপ্ট করি সেই জন্য।”
“হ্যাঁ সেটাই। বুঝতে পেরেছি তুমি লুকাসের বায়োলোজিকাল ফাদার না?”
অনেকক্ষণ ধরে হাসলাম সামনের ভদ্রলোকের কথা শুনে।
“না আমি বায়োলজিকাল ফাদার না। তবে কাগজপত্র ঠিক করে দাও যাতে এখন থেকে ওর পুরা দায়িত্ব আমি নিতে পারি। ওর মায়ের সাথে আমি বেশ কিছু সময় কাটিয়েছিলাম একবার। তার সুন্দর চোখ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।”
লুকাসকে আমার সামনে আনা হল। অবিকল মায়ের মত সেই সুন্দর চোখ। গভীর মমতায় লুকাস আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে তার সোনালি চুলে হাত বুলিয়ে বললাম, “চল আমার সাথে। আমাদের জীবন শুরু করি। আমার থেকে অনেক ভাল শৈশব তুমি পাবে।”
লুকাসকে নিয়ে আমি এস্তোনিয়া ফিরে আসি। দুইজনের একসাথে জীবন কাটানো শুরু হয়। আমার মতো একজন নিঃসঙ্গ মানুষ তার জীবন কাটানোর অর্থ খুঁজে পায়।