1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
সানাউল্লাহ সাগরের জন্ম ১৯৮৭ সালে। যতদূর জানি তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৩ সালে। দীর্ঘ দশ বছর কবিতার সঙ্গে বসবাস করার পর ২০১৩ সালে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘অলৌ..
TK. 140TK. 105 You Save TK. 35 (25%)
Product Specification & Summary
সানাউল্লাহ সাগরের জন্ম ১৯৮৭ সালে। যতদূর জানি তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৩ সালে। দীর্ঘ দশ বছর কবিতার সঙ্গে বসবাস করার পর ২০১৩ সালে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘অলৌকিক স্বপ্নের যৌথ বিবৃতি’। সে বছরই প্রকাশিত হয় তার যৌথ কবিতার বই ‘ অসম্ভব ফুৎকারে’। কবি যখন তার কবিতার সান্নিধ্যে আসেন তখন দেশ স্বাধীন হবার পর ৩০ বছর কেটে গিয়েছে। নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে আবর্তিত হয়েছে কবিতা। শুধুমাত্র সমাজ চেতনা নয়―কবিদের কবিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ব্যক্তিচেতনা। স্বাভাবিকভাবেই তরুণ কবিদের প্রকাশভঙ্গীতেও আসছে নতুন চমক। স্বাতন্ত্রতা।
কবি সানাউল্লাহ সাগরের দ্বিতীয় কবিতার বই ‘সাইরেন’ এর পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে প্রথমেই চোখে পড়ে কবিতার মুক্তাঞ্চলে তাঁর অনায়াস স্বাধীন ভ্রমন। মুগ্ধ বিস্ময়ে চোখ আটকে যায় একটি বিশেষ পঙ্ক্তিতে―
‘কমায় থেমেছি―তুলি হাতে ফুলষ্টপ আঁকবো এবার’
কাব্যগ্রন্থে প্রথম কবিতার শেষ পঙ্ক্তির এই ঘোষনায় নড়ে চড়ে বসি। কবির হাতের তুলির দিকে চোখ ফিরাই। বুঝতে পারি অন্যের সুরে সুর মেলাতে বা অন্যের স্লোগানে গলা মেলাতে কবিতার জগতে আসেন নি এই কবি। নিজের বুকের মধ্যেই স্লোগানের জন্ম দেন তিনি। কখনো কখনো এই স্লোগানই পরিণত হয় আর্তনাদে, প্রতিবাদ-দীপ্ত কথামালায়, কখনো বা বিষণ্ন উচ্চারণে।
সমাজমনস্ক এই কবির কলম থেকে ঝরে পড়ে কিছু রক্তাক্ত অক্ষর, কিছু শব্দমালা, যা নগ্ন করে দেয় লোভী ক্ষমতাবানদের ‘বেডরুমের গনিত’―
‘প্রনাম নিবেন মহামান্য পাঠক―সমাজ নিষিদ্ধ এ পদ্যখানা আপনাদের হাতে তুলে নেবার সময় সাবধান। সংস্কারের দেয়াল পাশে চুপ করে থাকা অন্ধকার যেন লেপটে না যায় রঙমুখা পালকিতে...’ (নিষিদ্ধ চিরকুট)
কবির অনেক কবিতায় সমাজের অভিবাবকদের প্রতি একটু শ্লেষ প্রকাশ পেয়েছে―। পাশাপাশি, প্রেম ও তার বিরহজড়িত উচ্চারণ―
“ শুধু এইটুকু―আপাতত আর নয়―বাকি সব মুছে দিলাম। ইচ্ছেমতো শিখে নিও। মেঠোপথের যন্ত্রণায় ছিঁড়ে আসা পালক―ভিতরে বাহিরে কী এক যন্ত্রণা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে থাকে। ........
―বাকি পথ বলে দেবে তার ব্যাকরণ।”
(অন্ধকার)
তন্দ্রিষ্ট পাঠকেরা অবশ্যই এই কবির বাকি পথ ও তার ব্যাকরণের প্রতি নজর রাখবেন।
এই কবির কবিতায় দেশকাল, সময়, প্রতিবাদ, স্মৃতিময় প্রেম ও প্রেমহীন জীবনের বিষাদ মূর্ত হয়েছে....কোথাও তা বাল্গাহীন কোথাও বা পরিশুদ্ধ ও পরিমিত। কেননা তিনি জানেন, শুধুমাত্র আবেগ নয় পরিশুদ্ধ আবেগই কবিতাকে অনন্যসুন্দর করে তোলে।
কবিতা কি হওয়া উচিত তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জবহব ধিষবহ বলেছিলেন― “ পরিপার্শ্ব থেকে গ্রহন এবং তার নির্যাসকে নিখুঁত শিল্পরূপ দেওয়ার মধ্যেই কাব্যের সার্থকতা...”
কবি সানাউল্লাহ সাগরের কবিতায় এই প্রয়াসের চিহ্ন রয়েছে। শব্দচয়ন, উপমা ও রূপকের মাধ্যমে কবিতাকে অকারণেই দুর্বোধ্য করে তোলেন অনেকে। অথচ আমরা জানি প্রথমপাঠে, কবিতার ভাষা যদি আকর্ষন না করে পাঠকদের তাহলে কবিতার আত্মাই অধরা থেকে যাবে তাদের কাছে।
সুখের বিষয় এই কবি আপাতসরল ভাষায় কিছু কবিতা উপহার দিতে চেয়েছেন তাঁর পাঠকদের। এই কবিতার বইয়ে ৪০টি কবিতাই টানা গদ্যে লেখা― এবং প্রতিটি কবিতার শেষ পঙ্ক্তিটি অনেকটা উপসংহারের মতো।
‘অদৃশ্য’ শিরোনামের কবিতাটির কথাই বলি- কি অনায়ান সারল্যে তিনি শুরু করেছেন এই কবিতা―
“ঘুমিয়ে পড়লাম―বৃষ্টির ছাঁট জানালা ডিঙালে ডেকে তুলিস। সূর্য/জাগলে গেলাস গেলাস সতেজ হাওয়া গিলে শুরু হবে নতুন/ নকশার কাজ...”
এই কবিতার মাঝপথে তিনি লিখেছেন―
“পৌরুষ শাসানো যৌবন তাস খেলছে উচ্ছলতার খোলা চাতালে...”
আর শেষ পঙ্ক্তিতে লিখেছেন―
“... স্বপ্ন দেখতে দেখতে উড়ে যাবো একদিন...”
স্বপ্ন আর স্মৃতির মধ্যেই আমাদের মায়াবী ভ্রমন। বেঁচে থাকা। নিত্য পারাপার। স্বপ্নেই আমাদের নিশ্চিত উড়ান।
আমাদের মতো এই কবিরও স্বপ্ন আর স্মৃতির সঙ্গে বসবাস। তার কয়েকটি পঙক্তি উদ্ধার করা যাক।
ক) “যদি জানতাম বৃষ্টিরা অসুখ মেপে আসে..ঘুমিয়ে থাকতাম শাপলার আঁচলে নির্জন কোন বিলে”(পড়শি)
খ) “ স্মৃতির পাঠশালায় পুরাতন হাওয়া দীর্ঘশ্বাস বিলায়” (আততায়ী)
গ) “জানলাম―ভালোবাসা অসুখের নাম” (অসুখ)
ঘ) “স্বপ্নদের শয়নায়জনে সব ইচ্ছেদের ছুটি দিয়ে দিলাম
... দূরে থাকাই ভালো―দেখা যায় আলো” (রাত্রিপাঠ)
ঙ) “ঘুমের মধ্যে থাকি স্বúœ দেখার লোভে” (লোভ)
চ) “যতদূরে যাবে ততোই স্পষ্ট হবে অতীত” (অভিভাষণ)
স্বপ্ন ও স্মৃতির পাশাপাশি তাঁর কবিতায় ছড়িয়ে আছে বিরহ জর্জর কিছু মগ্ন উচ্চারণ। যেমন-
১.“নিভে যাচ্ছি―যদি একবার আসতে”(প্রদীপ)
২. “বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে জ্যোৎস্না―ভয়ে ছুঁই না।”(নীল রাত্রির জোছনা)
৩.“কাঁদলে বৃষ্টি হয়―বৃষ্টি হলে কান্না পায়”(বৃষ্টি হলে কান্না পায়)
কবি সানাউল্লাহ সাগরের কবিতায় এমন অনেক উজ্জ্বল পঙ্ক্তি আছে, যা উদ্ধার করার বা তা নিয়ে আলোচনা করার লোভ সামলানো খুব কঠিন। কিন্তু এখানে তাঁর কবিতা সম্পর্কে সম্যক আলোচনা করার কোন সুযোগ নেই। আমি এখানে সূত্রধরের ভূমিকায়। কবির কবিকৃতি সম্পর্কে সামান্য আভাস দিয়ে পাঠকের সঙ্গে তাঁর কবিতার একটা যোগসূত্র স্থাপন করার চেস্টা করলাম, নিজের মনে করে।
সব শেষে দু’টি কথা বলার প্রয়োজন। ‘রঙখেলা’ কবিতায় তিনি লিখেছেন―
“সাবধানে থাকিস দোস্ত―আজকাল আসমানও নাকি তোদের গেষ্টরুমে―এসব ডায়লগ এই প্রথম শুনলাম তা কিন্তু নয়। সিঁড়ি মাপার প্রথম পরিচ্ছেদেই ছিলো বেসুরো এমন সব সঙ্গীত...”
কবিতার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে এমন অনেক বেসুরো সঙ্গীত তাঁর কানে আসবে। কবি নিজেও সেটা জানেন। আর জানেন বলেই কেমন অনায়ান দক্ষতায় লিখতে পারেন।
“আমি থামলেই পথ থেমে যায়”(পথ)
এই সহজ সরল আত্মনিষ্ট অনুভব কবি সানাউল্লাহ সাগরের কবিতায় অলৌকিক রহস্য সন্ধানে নিরন্তর ব্রতী রাখবে। পথ চলতে চলতেই তিনি পেয়ে যাবেন তাঁর মগ্ন উচ্চারণের কাঙ্খিত স্বরলিপি। এই তরুণ কবিকে ঘিরে আমাদের সকল প্রত্যাশা একদিন পূর্ন হবেই। বুদ্ধি নয়,যাঁরা হৃদয় দিয়ে ছুঁয়ে দিতে চান কবিতার মায়াবী শরীর, তাঁদের কাছে অচিরেই প্রিয় হয়ে উঠবে তাঁর কবিতা। এ আমার স্থির বিশ্বাস।
-মৃণাল বসুচৌধুরী
০৮-১১-১৪ খ্রিঃ, কলকাতা।