Category:বাংলাদেশের জেলা ও অঞ্চল ভিত্তিক ইতিহাস
কবে কখন কোনো জিনিসের আরম্ভ কী করে হয়- তা বলা কঠিন। সেই আরম্ভকালটি রহস্যে আবৃত থাকে। কিন্তু মন হঠাৎ কেন বিদ্রোহী হয়ে কর্মজগত থেকে ভাবজগতে প্রবেশ করেছে, আজ আর তা সঠিক বলতে পারবো ন..
কবে কখন কোনো জিনিসের আরম্ভ কী করে হয়- তা বলা কঠিন। সেই আরম্ভকালটি রহস্যে আবৃত থাকে। কিন্তু মন হঠাৎ কেন বিদ্রোহী হয়ে কর্মজগত থেকে ভাবজগতে প্রবেশ করেছে, আজ আর তা সঠিক বলতে পারবো না। শুধু অস্পষ্ট মনে পড়ে, ছন্দ মেলাবার আনন্দ-প্রয়াসে লিপ্ত আমাদের শৈশবের দিনলিপি। ভবিষ্যতে লেখালেখি হবে আমাদের জীবনের প্রধান আরাধ্য, তা আগে কখনো বুঝতে পারিনি। আজ কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের ম্লান সূর্যের মতো আকাশে উঁকি দিচ্ছে ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গবেষণাধর্মী গ্রন্থ লেখায় আমাদের সংগ্রাম শুরুর সেই প্রথম দিনগুলো। বেশ আনন্দ অনুভব হয় এই ভেবে যে-এই গ্রন্থের জন্য একদিন কর্মজীবনের সমস্ত কিছু তুচ্ছ করেছিলাম; সেই গ্রন্থ ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ আমাদের শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেয়নি। আমরা অন্তহীন আনন্দের উৎস খুঁজে পেয়েছি জীবনের মাঝে।...
“আমরা জানি, সংগ্রামই সত্য, সংগ্রামই সুন্দর। গবেষণা, সেও এক সংগ্রাম। আর বাঙালি সংস্কৃতি মূলত সমন্বয়বাদী। বাংলা সাহিত্যে স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা শতাব্দী-প্রাচীন।”
কুষ্টিয়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য-ধর্ম-বর্ণ, সকল দিক দিয়েই এ জেলার রয়েছে গৌরবময় অতীত। অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলা ছিল বঙ্গ সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা একটি গৌরবময় সাংস্কৃতিক পরিমÐল লাভ করেছে যা স্বাধীন বাংলাদেশে সংস্কৃতির পূণ্যপাদপীঠ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশিষ্ট লোকসাহিত্য বিশারদ ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য্য যথার্থই মন্তব্য করেছেন: ‘কুষ্টিয়া আউল-বাউল সাধনার লীলাভূমি’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের মূল্যবান অংশ অতিবাহিত করেছেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে।
তাই ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের শিকড় এদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর অনেক গভীরে প্রোথিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ইতিহাস, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতিসত্তা স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল। জাতি হিসেবে নিজের সত্যিকার পরিচয় জানা আমাদের সকলের কর্তব্য। বলা আবশ্যক, এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমাদের ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ পূর্ণতা লাভ করবে।
আশাকরি গবেষণা গ্রন্থটি সবশ্রেণির পাঠকের বেশ উপকারে আসবে- ইতিহাসপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে।
‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ দ্বিতীয় সংস্করণ আমাদের কাছে আমাদের জীবনের সপ্তম আশ্চর্যস্বরূপ। তাই এই সংস্করণের মুখবন্ধ রচনা করার সুযোগ পাওয়াটাকে আমরা আমাদের লেখকজীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত বলে মনে করছি। তুলনামূলক কিছুকাল বিরতি শেষে ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলো। দ্বিতীয় সংস্করণটি আগের হুবহু পুনর্মুদ্রণ নয়।
তবে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণও বটে। প্রথম প্রকাশে গৃহীত কিছু-কিছু লেখা বর্তমান সংস্করণে বর্জিত হয়েছে। তেমনি, পূর্বে সংগৃহীত কিছু প্রবন্ধও ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গ্রন্থে বর্তমান সংস্করণে স্থান করে নিয়েছে এবং নতুন নতুন কিছু তথ্য সংযোজিত হয়েছে। এবারের সংস্করণে কুষ্টিয়ার ইতিহাস যে সম্পূর্ণই তুলে ধরতে পেরেছি, তেমন দাবি আমরা করবো না।
অনেকাংশে সংযোজন করতে পেরেছি, অনেকাংশে পূর্ণতা পেয়েছে বলে মনে হয়। তবে, আমাদের ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গ্রন্থের অনুরাগী পাঠক-পাঠিকা, লেখক, গবেষক ও সমালোচকদের আশ্বস্ত করতে পারি এই বলে যে, গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে পাওয়া বর্তমান সংস্করণটি নিয়ে আমরা পূর্বের তুলনায় অধিকতর স্বস্তি বোধ করছি।
এই গ্রন্থে গ্রহণ-বর্জন ও নতুন হরফে মুদ্রণের ফলে ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গ্রন্থের পৃষ্ঠাবিন্যাসে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তার জন্য নতুন করে সূচিপত্র তৈরি করতে হয়েছে।
Report incorrect information