Category:#4 Best Seller inশিক্ষা ও শিক্ষাবিদ বিষয়ক প্রবন্ধ
"তিন ভুবনের শিক্ষা: জাপান-নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ" বইয়ের মুখবন্ধ:
একজন বাঙালী মা অথবা বাবা, যিনি বাংলাদেশে লেখাপড়া করেছেন, ভালাে-মন্দ বহু ধরণের অভিজ্ঞতার..
"তিন ভুবনের শিক্ষা: জাপান-নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ" বইয়ের মুখবন্ধ:
একজন বাঙালী মা অথবা বাবা, যিনি বাংলাদেশে লেখাপড়া করেছেন, ভালাে-মন্দ বহু ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, তিনি যখন শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত একটা দেশে গিয়ে নিজের সন্তানের শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতার অংশী হচ্ছেন, তখন তাকে কিভাবে দেখছেন, বা নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে কিভাবে চমকৃত বা হতাশ হচ্ছেন—এটা খুব সহজ-সরলভাবে তুলে ধরাই ছিল এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পরিকল্পনার প্রধান বিবেচ্য। একইসাথে লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের একজন বাবা অথবা মা এখানে যেভাবে তার বাচ্চার শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতার অংশী হচ্ছেন তাকেও পাণ্ডুলিপিতে পাশাপাশি রাখা। এতে করে আমাদের ধারণা হয়েছিল, বাংলাদেশের একজন অভিভাবক অথবা শিক্ষক অথবা শিক্ষা-প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, তাঁরা এদেশের পরিস্থিতির সাথে শিক্ষায় উন্নত একটা দেশের তুলনা আরাে একটু ভালােভাবে করতে পারবেন। আর সন্তানের মঙ্গল যেহেতু সব বাবা-মা বা শিক্ষক-অভিভাবকই চান, সেহেতু এই তুলনার মাধ্যমে তারা নিজের সন্তান বা শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন সুন্দর ও আনন্দময় করে তােলার জন্য যত্নবান হতে পারবেন। পাশাপাশি শিক্ষা-প্রশাসক বা ব্যবস্থাপকগণও তাদের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতাগুলাে থেকে কিছু করণীয় থাকলে সে-বিষয়ে ভাবতে পারবেন। কিন্তু পৃথিবীর তিন প্রান্ত জাপান-নেদারল্যাণ্ডস-বাংলাদেশে বসে তিন জনে মিলে একটা পাণ্ডুলিপির পরিকল্পনা করা এক কথা, আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখা তৈরী করা আরেক কথা। অনেক ইমেইল, ইনবক্স আর কথা চালাচালি-বলাবলি করে পাণ্ডুলিপি পরিকল্পনার কঠিন কাজটি শেষ করার পর দেখা গেল সে-অনুযায়ী লেখা তৈরী করা আরাে কঠিন। কারণ একটা বাচ্চা প্রতিদিন যেভাবে বড়াে হয় এবং শিক্ষাজীবনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে, তার সাথে আমরা অভিভাবকেরা যতাে অঙ্গাঙ্গীভাবেই সম্পৃক্ত থাকি না কেন, তা যদি লিখতে হয় সবার উপযােগী করে, তখন বুঝতে পারি, যার সাথে আমাদের এতাে আবেগ, উদ্বেগ, তাড়না, কষ্ট, ভালােলাগা, হতাশা ও প্রাপ্তি জড়িত, তা ভাষায় প্রকাশ করা কতখানি ধৈর্য ও পরিশ্রমের বিষয়। মনে হয় এর চেয়ে একটা গল্প-উপন্যাস বা প্রবন্ধ লিখে ফেলা অনেক সহজ। আপাত সহজ, কিন্তু প্রকৃত অর্থে জটিল সেই কাজটি করতে তাই আমাদের প্রায় দুই বছরেরও বেশী সময় লেগেছে। এর মাঝে অনেক মা-বাবাই আমাদের এই পরিকল্পনার অংশী হয়ে তাঁদের সন্তানের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যেটা আগে বললাম, যা প্রতিদিন এতােটা বাস্তব, এতােটা সজীব, যার ভুক্তভােগী অথবা ফলভােগী আমি নিজে। প্রতিদিন এভাবে, তা অপরের জন্য সুন্দর করে লেখা সহজ নয়। তাই যারা লিখতে চেয়েও লিখতে পারেননি, এই লেখা তাঁদেরও। সম্মিলিত এই আমাদের লেখায় নানা অসঙ্গতি নিশ্চিতভাবেই রয়েছে, যেগুলাে সম্মিলিতভাবেই আমরা পরবর্তী সংস্করণে পরিমার্জনা করতে চাই। তাই সে-বিষয়ে সকল পাঠক, অভিভাবক ও শিক্ষকের সহযােগিতার প্রত্যাশা। আমরা আশা করি দেশ-বিদেশের আরাে অনেক বাবা-মা-শিক্ষকঅভিভাবক এই লেখা পাঠ করে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে উৎসাহী হবেন। আর সেসব অভিজ্ঞতার সারাৎসার নিয়ে আমরা আগামীতে এমন শিক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করতে পারবাে যার মাধ্যমে একদিন এই ধ্বংসােন্মত্ত পৃথিবীর গতিমুখ ঘুরিয়ে দিতে পারবাে। যে অগণিত শিশু প্রতিদিন কোন তারার জগৎ থেকে ছুটে আসে, আর আমাদের প্রিয় কবির ভাষায় যার গায়ে নক্ষত্রের শীত লাগে, তার জন্য এক আলােকময় পৃথিবী নির্মাণ। করতে পারবাে।
Report incorrect information