154 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
"আত্মনির্মাণ"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ভ্রান্ত বিশ্বাসের বন্দী
হস্তিশিশু আদরিণী। মায়ের সাথে বনবাদাড় ভেঙে চষে বেড়ায় মুক্তির আনন্দে। এ আনন্দে ছেদ পড়ল একদি..
TK. 190TK. 143 You Save TK. 47 (25%)
In Stock (only 1 copy left)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
Product Specification & Summary
"আত্মনির্মাণ"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ভ্রান্ত বিশ্বাসের বন্দী
হস্তিশিশু আদরিণী। মায়ের সাথে বনবাদাড় ভেঙে চষে বেড়ায় মুক্তির আনন্দে। এ আনন্দে ছেদ পড়ল একদিন। শিকারিদের হাতে ধরা পড়ল সে। পায়ে শক্ত শিকল পরিয়ে বিক্রি করে দেয়া হলাে সার্কাস পার্টির কাছে। সার্কাসের পশুপালক তাকে ছ'ফুট লম্বা লােহার শিকল দিয়ে বিরাট থামের সাথে বেঁধে রাখল।
বনের মুক্ত প্রাণী আদরিণী বন্দী হয়ে গেল ছ'ফুট ব্যাসার্ধের বৃত্তের মাঝে। কিশােরী আদরিণীর কাছে এ এক অসহ্য যন্ত্রণা। বারবার জোরে টান মেরে শিকল ছিড়ে ফেলতে চেষ্টা করতে থাকে। চেষ্টায় লাভ হয় না কিছুই। শুধু পা রক্তাক্ত হয়ে উঠে। ব্যথা ও যন্ত্রণায় কাতরাতে হয়। রক্তাক্ত পায়ে টান পড়লে ব্যথা আরও বাড়ে। শিকল ছেড়ে না। মুক্তিও মেলে না। আস্তে আস্তে তার বিশ্বাস জন্মাতে লাগল, এ শিকল ভাঙা যাবে না । ভাঙতে গেলে ব্যর্থতাই আসবে, ব্যথাই বাড়বে।
আদরিণী বড় হতে লাগল। কিন্তু শিকল সে ভাঙতে পারল না। আস্তে আস্তে তার মুক্তির আকাঙ্ক্ষাও মন থেকে বিলীন হয়ে গেল। তার পৃথিবী সীমিত হয়ে গেল ছ’ফুট শিকলের বৃত্তের মাঝে। পায়ে একটু টান পড়লেই বােঝে তার সীমানা শেষ। এতেই সে অভ্যস্ত হয়ে উঠল। এখন আর শিকল বাধার জন্যে মােটা শক্ত কাঠের ডির প্রয়ােজন হয় না। ছাগল বাধার ছােট খটি হলেই চলে। পরিণত বয়সে বিশাল দেহ ও বিপুল শক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আদরিণী তার দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা ধারণার নিগড়েই আটকে থাকল। এক ঝটকায় খুঁটি থেকে নিজেকে মুক্ত করার শারীরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও তার মনে বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে যে এই ছ'ফুট ব্যাসার্ধের বৃত্তই তার পৃথিবী। এটাই তার বিধি। এটাই তার নিয়তি। যখনই তার পায়ে একটু টান লাগে তখনই সে ধরে নেয় এর বাইরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। সার্কাস দলের সাথে সে নানা জায়গায় যায়। শেখানাে খেলা দেখায়। একটি ছােট খুঁটিতেই এখন তাকে বেঁধে রাখা হয়।
সার্কাসের তাবুতে আগুন লাগল একদিন। সার্কাসের লােকজন যার যার জীবন নিয়ে পালাল। আগুন নেভানাের পর দেখা গেল অনেক কিছুর সাথে আদরিণীও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পায়ের সেই শিকল রয়েছে। খুঁটি পুড়ে গেছে। পর্যাপ্ত শারীরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও ভ্রান্ত বিশ্বাসের বন্দী আদরিণী মুক্ত হওয়ার কোন চেষ্টাই করেনি।
আদরিণীর এই কাহিনী কোন বানানাে গল্প নয়। যারা সার্কাসের দল দেখেছেন, তারা খোজ নিলেই জানতে পারবেন সার্কাসের বিশালকায় হাতিগুলােকে এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সার্কাসের বহু হাতি এভাবেই মারা গেছে অগ্নিকাণ্ডে।
হতভাগিনী এই হাতির মতই ভ্রান্ত বিশ্বাসের বন্দী নরনারীর সংখ্যা আমাদের সমাজে মােটেও কম নয়। কত ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস যে আমাদের মাঝে রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। যেমন: আমার পােড়া কপাল, এত দায়িত্ব পালনের যােগ্য আমি নই, সে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনাে করেছে, তার সাথে প্রতিযােগিতায় আমি পারব না, এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানাে মুশকিল', জীবনটা আমার দুঃখে-দুঃখেই যাবে', বড় কিছু করা আমার কপালে নেই, আমার কপালে সুখ সয় না, আমার এই অসুখ ভাল হবে না:••এরকম হাজারও নেতিবাচক ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের নিগড়ে আমরা বন্দী জীবন যাপন করছি।
বিশ্বাস ভ্রান্ত হােক বা সঠিক হােক, তার একটি সম্মােহনী ক্ষমতা রয়েছে।