Category:বাংলাদেশ ভ্রমণ
ভ্রমণ কাহিনী হিসাবে লেখা আমার পূর্বের দু'টি বই কত জনপদ কত ইতিহাস আর যমুনা গোমতীর তীরে একটি ভ্রমণ কথা পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। এই বই দু'টি নিছক ভ্রমণ কাহিনী ছিল না, ছি..
ভ্রমণ কাহিনী হিসাবে লেখা আমার পূর্বের দু'টি বই কত জনপদ কত ইতিহাস আর যমুনা গোমতীর তীরে একটি ভ্রমণ কথা পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। এই বই দু'টি নিছক ভ্রমণ কাহিনী ছিল না, ছিল ইতিহাসের সরল পাঠও। ইতিহাস এসেছে প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসাবে। আমার এই বইটি সেই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ভ্রমণকাহিনী। দেশ এবারও ভারত হলেও এবারের ভ্রমণ কথা আমাদের অত্যন্ত পরিচিত এলাকার, বিশেষ করে বাংলার ইতিহাসের সাথে যুক্ত কিছু অঞ্চল ঘিরে।
এই বইটি লিখতে আমাকে ভ্রমণ করতে হয়েছে পাটনা, বৌদ্ধগয়া, রাজগীর এবং পশ্চিমবঙ্গ। তবে ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলো ছিল বাংলার প্রান্তর, কলকাতা, পলাশী, কাশিমবাজার আর মুর্শিদাবাদ। আমাকে দু'বার যেতে হয়েছে কলকাতা হয়ে মুর্শিদাবাদে। মুর্শিদাবাদ ছিল স্বাধীন বাংলার শেষ রাজধানী। মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ছিল ষড়যন্ত্র, হত্যা, হঠকারিতা, বিশ্বাসঘাতকতা আর স্বাধীনতা হরণের ইতিহাস। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের শেষ স্থান মুর্শিদাবাদ আর ভাগিরথী নদীর অপরপারে খোশবাগ যেখানে আলীবর্দী খাঁসহ সিরাজের পরিবারের সমাধি।
এবারের ভ্রমণ আমাকে সুযোগ এনে দিয়েছিল এই উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম সাম্রাজ্য স্থাপনকারী সম্রাট বিম্বিসারের রাজধানী রাঙগীর আর তারই পুত্র অজাতশত্রুর রাজধানী 'পাটালিপুত্রা' ভ্রমণের। আজকের পাটনাই পাটালিপুত্রার ধারক। পাটনার একাংশে এখনও রয়েছে পাটালিপুত্রার ধ্বংসাবশেষ। সময়কাল গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায়, খ্রিস্টপূর্ব চারশত বছর পূর্বের কথা। গিয়েছিলাম জগৎখ্যাত বৌদ্ধ বিহার নালন্দায় আর গৌতম বুদ্ধের নির্বান প্রাপ্তির স্থান বৌদ্ধগয়াতে। এই ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকেই শুনেছি বর্তমান বিহারের রাজনীতির আখ্যান।
কলকাতা ভ্রমণে জানবার চেষ্টা করেছি কলকাতা শহরের জন্ম-ইতিহাস। জব চার্নকের ইতিহাস। কলকাতায় নবাব সিরাজের পরাজয়ের পর চক্রান্তকারীদের উত্থানের ইতিহাস। পলাশীর যুদ্ধের পর বাঙালি রাজা, মহারাজা আর জমিদারদের উত্থানের পর্বের সন্ধান করেছি। কলকাতা শহরের ইতিহাসের কিছু কিছু বিচিত্র কাহিনী এবং কিছু অপ্রচলিত দর্শনীয় স্থানের ইতিহাস আর ভ্রমণের বিবরণ তুলে ধরেছি।
ভ্রমণ করেছি পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্র। দেখেছি বাংলার ইতিহাসের অন্যতম ষড়যন্ত্রের সূতিকাগৃহ কাশিমবাজার কুঠি। এ সব জায়গার বিশদ বিবরণ দেবার চেষ্টা করেছি। আমার ভ্রমণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় এবং বাংলায় তথা ভারতবর্ষে ইংরেজ প্রভুত্ব কায়েমের ঐতিহাসিক পটভূমির জায়গাগুলো দেখবার। গিয়েছিলাম বাংলার শেষ রাজধানী মুর্শিদাবাদ। গিয়েছিলাম ভাগিরথী নদীর অপরপারে খোশবাগসহ অন্যান্য জায়গাগুলো দেখতে। বর্ণনা করেছি সেই সব অভিজ্ঞতার।
সবশেষে দেখতে গিয়েছিলাম বাংলা সাহিত্য আর ললিতকলা চর্চার বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠ শান্তিনিকেতন। বেশ কিছু সময় কাটিয়েছিলাম। তুলে ধরেছি যৎসামান্য বিবরণ।
আমি আমার পূর্বের ভ্রমণকাহিনীর মত এবারও ইতিহাসের অতি পরিচিত, স্বল্প পরিচিত বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। কিছু গবেষণা, কিছু ইতিহাসের পাঠ হতে এ সব তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। চেষ্টা করেছি বস্তুনিষ্ঠ থাকতে। এমন করতে গিয়ে অন্য লেখকদের মতই আমার অন্তরের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তবুও চেষ্টা করেছি অনুভূতিগুলোকে সীমিত রাখতে। কোথাও কোথাও আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য জুড়ে দিয়েছি। এগুলো আমারই মন্তব্য। দু'দফায় আমার এ ভ্রমণে সফরসঙ্গী ছিলেন যারা তাদের কথা লিখেছি। তাদের কথোপকথন, মন্তব্য, ইত্যাদি, যতদূর সম্ভব, অবিকৃত অবস্থায় লিপিবদ্ধ করেছি। আশা করছি, আমার সফরসঙ্গীরা সেগুলো সেভাবেই গ্রহণ করবেন। আমি তাদের প্রত্যেকের কাছে, লেখক হিসাবে কৃতজ্ঞ। এঁরা ছাড়াও বহু চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে। কয়েকজনের নাম পরিবর্তিত হলেও যতদূর সম্ভব তাদের সাথে আমার এবং আমার সফরসঙ্গীদের সাহচর্যের বিষয় হু বহু তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি।
Report incorrect information