7 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সাহিত্য প্রতিভা শামসুদ্দীন আবুল কালাম জীবন সায়াহ্নে এসে আত্মজীবনীমূলক রচনা লিখতে শুরু করেন। এ সময়ে লেখা তার কথা সাহিত্যেও ছিল নিজের জীবনেরই ছায়া। নিঃসঙ্গ প্র..
TK. 180TK. 135 You Save TK. 45 (25%)
Product Specification & Summary
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সাহিত্য প্রতিভা শামসুদ্দীন আবুল কালাম জীবন সায়াহ্নে এসে আত্মজীবনীমূলক রচনা লিখতে শুরু করেন। এ সময়ে লেখা তার কথা সাহিত্যেও ছিল নিজের জীবনেরই ছায়া। নিঃসঙ্গ প্রবাস জীবনে তিনি যে তখন খুব স্মৃতিতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন, এটা বোঝা যায়। আত্মজীবনীমূলক কয়েকটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিকে তিনি জীবনায়ন নামে একত্র করেছিলেন। ছিটেফোঁটা জীবনীমূলক রচনার পাশাপাশি সে সময়ে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী রচনায়ও সচেষ্ট হন। বলা যায়, তার জীবনের সর্বশেষ সাহিত্যকর্মের একটি হচ্ছে সেই পাণ্ডুলিপি: ঈষদাভাস।
শামসুদ্দীন আবুল কালাম মারা যান ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ১০ জানুয়ারি। ঈষদাভাস-এ তিনি ১৯৯৬ সালের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। এ সময় তিনি সুস্থ ছিলেন না। মনের দিক থেকেও হয়ে পড়েছিলেন নিঃস্ব। আপনজন বলতে তার কাছে কেউ ছিল না। ইতালির নিঃসঙ্গ প্রবাসজীবনের যন্ত্রণা তাকে হতাশ্বাস করে ফেলেছিল। সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণা তাকে স্থিরভাবে আত্মজীবনীটিও লিখতে দেয়নি। এ লেখাটি তাই কিছুটা এলোমেলো। পুনরাবৃত্তিও আছে নানা জায়গায়। ক্ষুন্ন হয়েছে কালের অনুক্রম। লেখকের আত্মজা ক্যামেলিয়ার ধারণা, এটি পাণ্ডুলিপির একটি খসড়া মাত্র। পাণ্ডুলিপিটি গুছিয়ে প্রকাশ করার জন্য সম্ভবত দেশে কাউকে তিনি পাঠিয়েছিলেন। এভাবে বহু স্বজনের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। বহু পাণ্ডুলিপি খোয়া গেছে। বিভিন্ন জনের কাছে লেখা চিঠিপত্রে এ ব্যাপারে তার অভিমানের কথাও অব্যক্ত থাকেনি। ক্যামেলিয়া আরেকটি আশঙ্কার কথা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি তার অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিগুলো সরাসরি পাননি। এগুলো এসেছে নানা হাত ঘুরে। তার ধারণা, এ সময়ও ঈষদাভাস-এর গোছানো পাণ্ডুলিপিটি গায়েব হয়ে গিয়ে থাকতে পারে।
যা-ই হোক, শামসুদ্দীন আবুল কালাম যে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গভীর দরদ দিয়ে এ পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন জনের কাছে তিনি ঈষদাভাস-এর কথা বলেছেন; পত্রে এর উল্লেখ করেছেন। সেসব বিষয়ে বিভিন্ন জনের লেখা পড়ে ঈষদাভাস সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠি। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সখ্যতা গড়ে ওঠে ক্যামেলিয়ার সঙ্গে। প্রথমে খুব একটা পাত্তা দেননি। কিন্তু পরবর্তী কালে আমি তার বিশ্বাস অর্জন করি। তিনি তাঁর বাবার কয়েক স্যুটফেস ভর্তি পান্ডুলিপি আমার সামনে উন্মুক্ত করেন। আমি বিভোর হয়ে খুঁজতে থাকি আশ্চর্য সব গুপ্তধন।
ক্যামেলিয়ার কাছে আসা এলোমেলো, ছেঁড়াখোঁড়া পাণ্ডুলিপির ভেতর ব্যাপক অনুসন্ধানের পর ঈষদাভাস-এর এ পাণ্ডুলিপি খোঁজ মেলে। জোড়াতালি দেওয়ার পর তার হাতে লেখা পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২০। শামসুদ্দীন আবুল কালামের হস্তাক্ষর সুন্দর, তবে পাঠোদ্ধার কঠিন। কালিও কোথাও কোথাও লেপ্টে গেছে, লেখার শৈলীতেও কোথাও আছে অস্পষ্টতা। তবু শেষ পর্যন্ত এর একটা রূপ দাঁড় করানো গেছে। তার বিশাল জীবনের তুলনায় এটি অনেকটাই অসম্পূর্ণ। ধারণা করি, বেঁচে থাকলে শামসুদ্দীন আবুল কালাম ঈষদাভাস-এর আরো খণ্ড প্রকাশ করতেন। তবে যা তিনি প্রকাশ করেছেন, তার মূল্যও নানা বিচারে কম নয়।
এখানে প্রকাশিত হলো ঈষদাভাস-এর অতি কিঞ্চিদাভাস। এটি মূলত: ঈদসংখ্যা প্রথম আলোর জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে সম্পাদনা করেছিলাম।